ইসলাম
একটি পূর্নাংগ জীবন-বিধান। একজন মুসলিমকে তাঁর
ধর্মীয় জীবন, ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন সমস্ত কিছুই পরিচালনা করতে হয় ইসলামী বিধান অনুযায়ী। আর
এজন্যই প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর জন্য
ঈমান-আকীদা, ইবাদাত-বন্দেগী ও হালাল-হারাম
সম্পর্কে মৌলিক বিদ্যা অর্জন করা ফারযে আইন বা অত্যাবশ্যক। যারা এই পরিমান
বিদ্যা অর্জন করবে না, তাদের পক্ষে ইসলামী বিধান অনুযায়ী
স্বীয় জীবন যাপন করা অসম্ভব।
সমাজে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য বা মাদ্রাসা-মাসজিদ-ঈদগাহ সহ যে কোন প্রতিষ্ঠান চালনার জন্য ফারযে আইন বিদ্যা থাকা অপরিহার্য। হযরত উমর ইবনে
আব্দুল আযীয রহিমুহুল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি ইলম ছাড়া আমল
করবে সে সঠিকভাবে কাজ সম্পাদনের পরিবর্তে বরবাদ করবে
তার চেয়ে বেশি [ তারীখে
তাবারী, খন্ড নং ৬, পৃষ্ঠা নং ৫৭২ ]। হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহ বলেন, তোমরা নেতৃত্ব লাভের আগেই জ্ঞান হাসিল করে নাও। আবূ আবদুল্লাহ্ বুখারী বলেন, আর নেতা বানিয়ে দেওয়ার পরও [ জ্ঞান অর্জন চালিয়ে যাও ], কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ বয়োবৃদ্ধকালেও ইলম
শিক্ষা করেছেন [ সহীহ বুখারী, কিতাবুল ইলম, বাব ইলম ও হিকমতের ক্ষেত্রে সমতুল্য হওয়ার আগ্রহ ]।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করে বলেন, “ ওই
সম্প্রদায়ের কী হল যে, তারা
প্রতিবেশীদেরকে দ্বীনের সঠিক সমঝ ও বুঝ দান করে না; দ্বীন শিক্ষা দেয় না, দ্বীনের বিষয়াবলী বোঝায় না, তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ করে না, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে না? ওই সম্প্রদায়েরই বা কী হল যে, তারা প্রতিবেশী থেকে দ্বীন শেখে না, দ্বীনের সঠিক সমঝ ও বুঝ নেয় না, দ্বীনের বিষয়াদি বুঝে নেয় না? আল্লাহর কসম! হয়ত তারা তাদের প্রতিবেশীদেরকে দ্বীন শেখাবে, দ্বীনের সঠিক সমঝ ও বুঝ দান করবে, দ্বীনের বিষয়াদি বোঝাবে, সৎ কাজের আদেশ করবে, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে আর যারা জানে না ওরা
তাদের থেকে শিখবে, সঠিক বুঝ
গ্রহণ করবে, দ্বীনের বিষয়াদি
ভালোভাবে বুঝে নেবে নতুবা আমি তাদেরকে দুনিয়াতেই নগদ শাস্তি দিব”। [তবারানী, মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ খন্ড নং ১, পৃষ্ঠা নং ১৬৪ ]।
এর অর্থ এই নয় যে, যে ব্যক্তি আলেম নন তিনি নেতৃত্ব প্রদানে অযোগ্য। শিক্ষক, ডাক্তার,
ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী মানুষ সকলেই আমাদের সমাজের সম্পদ এবং পরম আদরনীয়। শিক্ষক-ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হোন বা ব্যবসায়ী-শ্রমজীবী, সমাজে নেতৃত্ব প্রদানে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে কেবল এই ফারযে আইন বিদ্যাটুকু অর্জন করে নিলেই হবে। আর এই বিদ্যা অর্জন করা তেমন কঠিন কোন বিষয় নয়।
আমরা উপন্যাস-গল্প-থ্রিলার-পত্রপত্রিকা পাঠে প্রচুর সময় দিতে পারি। অথচ আল্লাহ পাক যে জ্ঞান অর্জন করা আমাদের জন্য ফরয করেছেন তার জন্য কি আমরা সময় বের করতে পারব না? আল্লাহ পাক বলেন, “ জ্ঞানীরা ও অজ্ঞলোকেরা
কি এক সমান ?” [ কানযুল ইমান, সূরা যুমার, সূরা নং ৩৯, আয়াত নং ৯]। কুরআনে কারিমের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, “ তোমাদের
মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যাদেরকে ইলম প্রদান করা
হয়েছে আল্লাহ তাদের মর্যাদা সমুন্নত করবেন” [ কানযুল ইমান, সূরা
মুজাদালাহ, সূরা নং ৫৮, আয়াত নং ১১ ]।
তবে সমাজ-নেতৃত্বের বাস্তব চিত্র হল, বর্তমানে বহু মাদ্রাসা-মাসজিদ-ঈদগাহে এমন
লোকজন নেতৃত্বে আছেন যারা এই ফারযে আইন বিদ্যা তো অর্জন করেনই নি, এমনকি তাঁরা না কালেমা তৈয়বা
শুদ্ধ করে পাঠ করতে পারেন, না ফরয গোসল
কিভাবে করতে হয় তা জানেন! অনেকে হয়ত পবিত্রতা অর্জনের নিয়ম শেখেন নি বলে সর্বদা অপবিত্রই থাকেন, অপবিত্রই অবস্থাতেই মাসজিদে
যান এবং অপবিত্রই অবস্থাতেই ইনতেকাল করেন।
কেউ হয়ত মুখে সুন্নাত রাখতে লজ্জাবোধ করেন এবং প্রতিদিন দাড়ি কাটার মত হারাম
কাজ করেন। একটি ঈদগাহ কমিটির মিটিং প্রত্যক্ষ করলাম। মিটিঙের
শুরুতে না বিসমিল্লাহ শরীফ পাঠ করা হল, না কুরআন পাক তেলাওয়াত করা
হলো। না আল্লাহর পাকের
প্রশংসা করা হোল, না রসূল পাকের উপর দরুদ শরীফ প্রেরণ করা হলো। না
মিটিং শেষে দোয়া করা হলো। এমনকি
সারা মিটিং
জুড়ে ঈদগাহ
কমিটির কেউ
একবার আল্লাহ পাকের নামও নিলেন না!এরুপ ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয় এবং এরুপ
কমিটির সংখাও কম নয়। এধরণের কমিটি ইসলামের
দৃস্টিতে নাযায়েয। এই কমিটিগুলিই আবার বৈধ ও প্রশংশনীয় রুপ গ্রহন করবে যদি সম্মানিত সদস্যগণ ফারযে আইন বিদ্যাটুকু
অর্জন করে নেন এবং
সে অনুযায়ী জীবনশৈলীকে সংশোধন করে নেন। এতে
তাঁদের জন্য যেমন ইহকাল ও পরকালে রয়েছে মহাপুরস্কার, তেমনি সমাজসংস্কারে এবং আদর্শ সমাজ গঠনে তাঁরা হয়ে
উঠবেন মূল চালিকাশক্তি।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে সর্বাধিক জরুরী প্রয়োজন হল, প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচালন কমিটি
গুলিতে সংশ্লিস্ট সমাজের যোগ্য ইমাম সাহেবগণকে সংযুক্ত করা। এতে নাযায়েয কমিটিসমূহও বৈধ রুপ গ্রহন করবে। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে সতর্ক করে বলেছেন,
যখন কোনো সম্প্রদায় সৎকাজের
আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ ত্যাগ করবে, তখন তারা অহির বরকত থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে [ তিরমিজি ]। নিঃসন্দেহে সৎকর্মে নির্দেশ প্রদানে এবং অন্যায় কাজে নিষেধ করার ক্ষেত্রে ইমাম সাহেবগণই
সর্বাধিক সক্রিয় ও প্রভাবশালী। তাঁরা হয়ত সমাজে জালিমদের কাছে ধমক খাচ্ছেন কিংবা শাসিত হচ্ছেন কিন্তু অন্যায় এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সমাজ মেরামতে তারাই সবচেয়ে কার্যকর অবদান রাখছেন। তারাই সমাজে অপরাধে জড়িত ও কুরআনবিমুখ মানুষগুলোকে কোরআন ও হাদিসের কথা শুনাচ্ছেন। বিচ্ছিন্নভাবে
কোন আলেম কর্তৃক অনভিপ্রেত কোন ঘটনা হয়ত সম্পাদিত
হয়ে যেতে পারে কিন্তু সামগ্রিকভাবে এই অবহেলিত জননেতাগণই নবীগণের
ওয়ারিশ যারা নবুয়াতী ইলমের সংরক্ষণ ও জাতিকে নৈতিক দিকনির্দেশনা দানে নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। ফলে পরিচালন কমিটিতে যোগ্য ইমাম সাহেবগণকে সংযুক্তকরণে বিরোধিতা করার অর্থ
হলো ইসলামী বিধানের বিরোধিতা
করা। এতে বিরোধিতাকারীর যে কেবল গোনাহ হবে
তা নয়, বিরোধিতার ক্ষেত্রে অনড় থাকলে কুফরী হয়ে যাওয়ারও আশংকা আছে।
আসুন!
সমাজ-পরিচালনা, সমাজসংস্কার ও আদর্শ
সমাজ গঠনে আমরা বলিষ্ঠ ভাবে ইসলামী দিকনির্দেশনা অনুসরণ করি।! এতে আমাদের ধর্মীয় জীবন, ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবন হয়ে উঠবে শান্তি-ঋদ্ধ
ও সুশৃঙ্খল।
দোয়াপ্রার্থী,
মুফতী মুহাম্মাদ এ কে আযাদ আল কাদেরী বাবলা, মালদাহ ।
মুঠোফোন – ৮০০১৬০৫৫১৫