লেখক : মাওলানা মুহাম্মদ এ কে আজাদ (আবু আরিফ আল আলাভী )
প্রায় প্রতিবার ঈদের
দিনক্ষন নিয়ে দেখা দেয় কলহ, বিভ্রান্তি ও বিশৃংখলা। খুশির ঈদ পরিণত হয় বিবাদের
বস্তুতে। এই বিশৃংখলা প্রকৃতপক্ষে ইসলাম ও ইবাদত-উপাসনা সম্পর্কে ইসলামের গাইডলাইন সম্বন্ধে আমাদের অজ্ঞতার
ফল। দিন কাটে, মাস কাটে, বছর কাটে- কিন্তু ইসলামের যে শিক্ষাটুকু অর্জন করা ফরজে
আইন বা অপরিহার্য, তার ধারে-কাছে ও ঘেঁষার চেষ্টা করি না।
হাদীসের নির্দেশ : আবু হুরায়রা রা:
বলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-“তোমরা (চাঁদ)
দেখে রোযা রাখ ও (চাঁদ) দেখে রোযা ভাঙ্গো (অর্থাৎ ঈদ
করো ) ” ( বুখারী
শরীফ-২/৬৭৪) । মহা নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর ও বলেছেন-“ তোমরা (চাঁদ)
দেখে রোযা রাখ ও (চাঁদ) দেখে রোযা ভাঙ্গো (অর্থাৎ ঈদ
করো ) , আর যদি তোমাদের উপর আকাশ
মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে তোমরা ৩০ দিন পূর্ণ কর”( মুসনাদে আহমাদ-১৬ /৯১)। এই হাদীসদ্বয় অনুসারে, ঈদের জন্য চাঁদ দেখা
শর্ত, কোন কারনে ২৯শে রমজানের পর চাঁদ দেখা না দিলে, ৩০ দিন পূর্ণ করে নিতে হবে। পাশাপাশি কোন জায়গায় চাঁদ দেখা দিলে শরীয়ত-সম্মত
ভাবে সাক্ষ্য সংগ্রহ ও তা ঘোষনা করার ব্যবস্থা করতে হবে।
হাদীসের উল্টোপথে আমরা : এবার ও কিছু ভাই প্রায়
দশ দিন আগে থেকে হাদীসের পরিপন্থী কথা বলতে শুরু করেছেন যে এবার ঈদ মঙ্গলবার বা
২৯শে জুলাই (২৯টি রোজার পরেই ) অনুষ্ঠিত
হয়ে যাবে। যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, “কেন, কোন হাদীসের ভিত্তিতে তুমি এই কথা বলছ”?,
তাঁরা নীরব থাকে। কিন্ত ভিত্তিহীন গুঞ্জন আর গুজব চলতেই থাকে ! রোজার মত অতি-গুরুত্ব্বপূর্ন একটি
এবাদতকে নিয়ে চলে ছেলেখেলা ! হাঁ, এমন কথা বলা যেতে পারে যে, চাঁদ দেখা দিলে ইন শা
আল্লাহ মঙ্গলবার ঈদ হয়ে যাবে, না হলে বুধবার।
কিন্তু সরাসরি ঘোষনা করা যে ঈদ মঙ্গলবারেই হবে, এরুপ বলা হাদিসকে অস্বীকার করার নামান্তর। মুলত: তিন ধরণের লোক এরুপ প্রচার চালায় :
[১] কিছু সাদাসিধে সরল মানুষ । এরা অন্যের দ্বারা প্রাভাবিত
হয়ে এবং আবেগ তাড়িত হয়ে একাজ করেন। এদেরকে সঠিক বিষয়টি বুঝিয়ে দিলেই অবশ্য তাঁরা বুঝে যান।
[২]
কিছু জেনারাল শিক্ষিত অহংকারী মানুষ। টিভিতে কিছু লেকচার শুনে এবং বাংলায় দু-একটি চটি
ধর্মীয় বই পড়ে তাঁরা নিজেদেরকে গবেষক, হাদীস-বিশেষজ্ঞ ও সর্বাপেক্ষা বড়
ইসলাম-সংস্কারক বিবেচনা করেন। সমীক্ষা চালালে দেখা যাবে যে এদের এক হাজার জনের
মধ্যে ৯৯৯ জনই কালিমা তাইয়িবা শুদ্ধ করে
পড়তে পারেন না। এমনকি ফরজ গোসলের ফরজ কয়টি যদি জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে এরা চোখে
অন্ধকার দেখবেন। অথচ আলেম শ্রেনীকে এরা অবজ্ঞার দৃস্টিতে দেখেন এবং সর্বদা বিশ্ব-বরেন্য
উলেমায়ে কেরাম এবং ঈমামদের ত্রুটি আলোচনা করেন। আউলিয়ায়ে কেরাম সম্পর্কে এদের
অবজ্ঞা তো সীমাহীন ও অসহনীয়।
[৩] সউদি আরবের অনুসারী ফির্কা-পরস্ত
কিছু খারিজী মৌলবী। এরা কথায় কথায় লোকের
কাছ থেকে তারা হাদীস দেখতে চান কিন্তু তাদের নিকট থেকে হাদীস এখতে চাওয়া হলে তারা
মুখকে বাংলা পাঁচের মত করে নেন। এদের কাজই হোল কেবল মুসলামানদের মধ্য ঝগড়া বিবাদ
লাগানো। তাঁরা মুসলমানদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে সউদি আরবের এক দিন পরে ঈদ করতে
হয়। কিছু খারিজী মৌলবী এমন ও প্রচার করেন
যে সউদি আরবের সঙ্গে সঙ্গেই ঈদ করতে হয়। এবার রমজান শুরুর আগে এক খারিজী মৌলবীর
সঙ্গে আমার নিম্নরুপ আলোচনা হচ্ছিল:
আমি: কি শাইখ, রোজা কখন ধরছ ?
খারিজী মৌলবী : হেঁ হেঁ, সউদি
আরবের এক দিন পরেই তো রোজা শুরু হয়।
আমি: ভাই, এটা আবার কোন হাদীসে
আছে যে সউদি আরবের এক দিন পরে রোজা শুরু করতে হয়?
খারিজী মৌলবী : হেঁ হেঁ, হাদীসে নেই তবে আমরা এভাবেই ধরি
আমি: একথা কোন অজ্ঞ বলতে পারে ।
কিন্তু তুমি তো আলেম, তুমি কিভাবে এই কথা বলছ ?
খারিজী মৌলবী : হেঁ হেঁ, ঐ আর কি .........
আমি: রোজা শুরু করার সঙ্গে চাঁদের
সম্পর্ক না সউদি আরবের সম্পর্ক ? হাদীস কি বলে?
খারিজী মৌলবী : হেঁ হেঁ, হাদীস অনুসারে, রোজা শুরু করার সঙ্গে চাঁদের
সম্পর্ক।
আমি: তাহলে যারা সউদি আরবকে অনুসরণ
করে তারা ঠিক করছে না ভূল করছে ?
খারিজী মৌলবী : হেঁ হেঁ, ভুলই করছে ।
আমি: বাংলাদেশের রাজশাহীর কিছু
মানুষ আবার ঐদিনই ঈদ করে যেদিন সউদি আরব করে । তারা ঠিক করছে না ভূল করছে ?
খারিজী মৌলবী : হেঁ হেঁ, ভুলই করছে ।
আমি: তা এদেরকে বোঝাচ্ছ না কেন ?
নিজেদেরকে দাবী কর ‘হাদীস-ওয়ালা’ বলে অথচ সবক্ষেত্রে হাদীস-বিরোধি কাজ কেন কর?
[খারিজী
মৌলবী নীরব থেকে গেল]।
আমাদের দায়িত্ব : শরীয়তের নির্দেশকে যথাযথ ভাবে মুসলমানদের নিকট পৌছিয়ে দেওয়া আমাদের ন্যুনতম কর্তব্য।
No comments:
Post a Comment